উঁচু দেয়ালে ঘেরা পুরানো ধরনের বিশাল দোতলা বাড়ি। বাড়ির সামনে এবং পেছনে গাছ গাছালিতে জঙ্গলের মতো হয়ে আছে। কিছু কিছু গাছের গুঁড়ি কালো সিমেন্টে বাঁধানো। বাড়ির নাম নিরিবিলি, শ্বেতপাথরে গেটের উপর নাম লেখা, অবশ্যি 'র' এর ফোঁটা মুছে গেছে। পাড়ার কোনো দুষ্টু ছেলে হারিয়ে যাওয়া ফোঁটাটা বসিয়ে দিয়েছে 'ব' এর উপর। এখন বাড়ির নাম 'নিবিরিলি'।
সাধারণত যে সব বাড়ির নাম 'নিরিবিলি' হয়, সেসব বাড়িতে সারাক্ষণই হইচই হতে থাকে। এই মুহূর্তে এ বাড়িতে অবশ্যি কোনো হইচই হচ্ছে না । বাড়ির প্রধান ব্যক্তি সোবাহান সাহেবকে বারান্দার ইজি চেয়ারে পা মেলে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাঁর মুখ চিন্তাক্লিষ্ট। চোখে সুস্পষ্ট বিরক্তি।
সোবাহান সাহেব বছর দুই হলো ওকালতি থেকে অবসর নিয়েছেন। কর্মহীন জীবনে এখনও অভ্যস্ত হতে পারেন নি। দিনের শুরুতেই তাঁর মনে হয় সারাটা দিন কিছুই করার নেই। তাঁর মেজাজ সেই কারণে ভোরবেলায় খুবই খারাপ থাকে। আজ অন্য দিনের চেয়েও বেশি খারাপ, কেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। শরৎকালের একটা চমৎকার সকাল। ঝকঝকে রোদ, বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ। এ রকম একটা সকালে মন খারাপ থাকার প্রশ্নই আসে না।
সোবাহান সাহেবের গায়ে হলুদ রঙের একটা সূতির চাদর। গলায় বেগুনি রঙের মাফলার। আবহাওয়া বেশ গরম, তবু তিনি কেন যে মাফলার জড়িয়ে আছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। তাঁর হাতে একটা পেপার ব্যাক, ডিটেকটিভ গল্প। কাল রাতে বত্রিশ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়েছিলেন। গত এক ঘণ্টা ধরে তেত্রিশ নম্বর পৃষ্ঠা পড়তে চেষ্টা করছেন, পারছেন না। বার বার ইচ্ছে করছে বই ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে। তেত্রিশ পৃষ্ঠায় নেল কাটার দিয়ে খুঁচিয়ে স্মিথ নামে একটি লোকের বাঁ চোখ তুলে নেবার বিষদ বর্ণনা আছে। সোবাহান সাহেব অবাক হয়ে পড়লেন – চোখ উপড়ে তুলে নেবার সময়ও মি. স্মিথ রসিকতা করছে এবং গুন গুন করে গাইছে-লন্ডন ব্রিজ ইজ ফলিং ডাউন ।...